অামাদের সম্পর্কে জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন

উম্মাতে মুহম্মাদ - আদর্শে ফুরকান

এটি ইসলামিক সংঘ, যার কাজ মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে সচেতন করা এবং বিভিন্ন ধরনের সমাজ সংস্কারমূলক কাজ পরিচালনা করা । বর্তমানে এটি বরিশাল বিভাগের ...

ব্লগ থেকে

আজ মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য জরুরি হয়ে পরেছে?


আজ মুসলিম মিল্লাতের ঐক্য জরুরি হয়ে পরেছে?

সৈয়দ আমজাদ হোসেন : পবিত্র আল-কুরআনের বহু আয়াতে ও বিভিন্ন হাদীসে সকল মুমিনকে একত্রিত থাকতে এবং পরস্পর মতপার্থক্য না করতে দ্ব্যর্থহীনভাবে নির্দেশ দেয়া হয়েছে কোনো কোনো আয়াত ও হাদীসে মতপার্থক্যে লিপ্ত হবার কঠিন পরিণতি সম্পর্কেও লোকদেরকে সতর্ক করা হয়েছেযেমন আল্লাহ তাআলা বলেন, “এবং কখনোই মুশরিকদের দলভুক্ত হয়ো না, (তাদের মধ্যে এমনও আছে যে,) যারা তাদের দীনকে টুকরো টুকরো করে দিয়েছে এবং তারা নানা ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছেপ্রত্যেক দলই নিজেদের কাছে যা কিছু রয়েছে, তা নিয়ে উৎফুল্ল” (“আল-কুরআন, ৩০:৩১-৩২”)
অন্য আয়াতে তিনি বলেন, “আর তোমরা তাদের মতো হয়ে যেয়ো না, যাদের কাছে (আল্লাহর পক্ষ থেকে) সুস্পষ্ট নিদর্শন আসার পরও বিভিন্ন দল-উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে এবং নিজেদের মধ্যে নানা ধরনের মাতনৈক্য সৃষ্টি করেছেএরাই হচ্ছে সেসব লোক, যাদের জন্য কঠোর শাস্তি রয়েছে” (“আল-কুরআন, ৩: ১০৫”) তিনি আরো বলেন, “যারা এ কিতাব নিয়ে মতানৈক্য লিপ্ত হয়েছে, তারা সত্য ও ন্যায়ের পথ থেকে বহু দূরে নিক্ষিপ্ত হয়ে গেছে” (আল-কুরআন, ২: ১৭৬”) রাসূলুল্লাহ (স.) বলেন, “তোমরা মতবিরোধ করো নাকেননা এতে তোমাদের অন্তরগুলোর মধ্যেও দূরত্ব তৈরি হবে” (“মুসলিম, আস-সাহীহ, অধ্যায়: সালাত, পরিচ্ছেদ: তাসবিয়াতুস সুফূফ, হা.নং: ১০০০”) অন্য একটি হাদীসে তিনি বলেন, “তোমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলো কেবল এ জন্যই ধ্বংস হয়ে গেছে যে, তারা (আল্লাহর) কিতাব নিয়ে মতবিরোধ করতো” (“মুসলিম, আস-সাহীহ, অধ্যায়: ইলম, পরিচ্ছেদ : আন-নাহযু আন মুতাশাবিহিল কুরআন, তাসবিয়াতুল সুফূয়, হা. নং: ৬৯৪৭।) রাসূলুল্লাহ (স.)-এর যুগে তাঁর অনুসারীগণের মধ্যে কোনোরূপ মতপার্থক্য দানা বাঁধতে পারেনিএ সময় যদিও ক্ষেত্রবিশেষে সাহাবা কিরাম (রহ.)-এর মধ্যেও কিছুটা মতপার্থক্য তৈরি হতো; তবে তাঁর উপস্থিতির সুবাদে এ মতপার্থক্য সহজেই নিরসন হয়ে যেতোতাঁরা যখনই কোনো সমস্যা বা মতপার্থক্যের সম্মুখীন হতেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর শরণাপন্ন হতোনতিনি তাঁদেরকে সঠিক ফয়সালাটি জানিয়ে দিতেনতবে তখনকার এরূপ কছিু ঘটনার কথঅও জানা যায় যে, সাহাবা কিরাম রা. কোনো অভিযান মাদীনা থেকে বেশ দূরে অবস্থঅন করছিলৈন এবং এমন সময় তাঁরা এরূপ কোনো পরিস্থিতির সম্মুখীন হন যে, যা নিয়ে তাঁদের মধ্যে রীতিমত মতপার্থক্য তৈরি হয় ফলে তাঁরা মাদীনায় ফিরে আসলেন, তখন তাঁরা সকলেই রাসূলুল্লাহ (স.) কে ঘটনাটি জানালেন এবং সে সাথে তাঁদের নিজেদের ইজতিহাদগুলোও পেশ করলেনরাসূলুল্লাহ (স.) ঘটনাটির পুরো বৃত্তান্ত শুনে হয়তো তাদের ইজতিহাদগুলো বহাল রাখলেন অথবা সঠিক ফায়সালাটি জানিয়ে দিলেনসাহাবা কিরাম (রা.) সঠিক ফায়সালাটি জেনে খুশি হলেন এবং এভাবে তাদের মধ্যকার মতপার্থক্য ও নিরসন হয়ে গেলো
হযরতআবদুল্লাহ ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, খন্দক যুদ্ধের দিন রাসূলুল্লাহ (স.) সাহাবীদের বললেন, ‘তোমাদের কেউ যেন বানূ কুরাইযা পৌঁছার পূর্বে সালাত আদায় না করেপথে সালাতুল আসরের সময় শেষ হওয়ার উপক্রম হলে একদল সাহাবী বললেন, সময় পার হয়ে গেলেও বনূ কুরাইযায় পৌঁছার পূর্বে আমরা সালাত আদায় করবো নাঅপর সাহাবী বললেন, আমরা পথিমধ্যেই সময়মতো সালাত আদায় আদায় করবোকেননা সালাত কাযা করানো রাসূলুল্লাহ (স.) এর উদ্দেশ্য ছিল না বরং আমাদের গতি দ্রæত করাই ছিল তাঁর একান্ত উদ্দেশ্যযাতে সালাতুল আসরের পূর্বে সেখানে পৌঁছা যায়ঘটনা শুনে রাসূলুল্লাহ কোনো দলকেই তিরস্কার করেননি। (ইমাম বুখারী, আস-সাহীহ, অধ্যায়: আল-মাগযী, পরিচ্ছেদ : মারজিউন্নাবী সা. মিনাল আহযাব হা. নং- ৩৮৯৩হাফিজ আব্দুর রাহমান আস-সুহাইলী [৫০৮-৫৮১ হি.] রহ. ও অন্যান্য বিশিষ্ট মুহাদ্দিসগণ বলেন, এ হাদীস থেকে দুটি বিষয় বোঝা যায়, প্রথমত : আয়াত বা হাদীসের বাহ্যিক অর্থের ওপর আমল করা যেমন দোষনীয় নয় তেমনি ইজতিহাদের প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বিশেষ অর্থ গ্রহণ করা ও নিন্দনীয় নয়দ্বিতীয় : শারীআহর অপ্রধান বিষয়সমূহে মুজতাহিদগণের সকলেই সঠিকতাঁদের কাউকেই ভ্রান্ত বলা যাবে না। (ইবনু হাজার, ফাতহুল বারী (বৈরুত : দারুল মারিফাহ, ১৩৭৯ হি.) খ. ৭, পৃ, ৪০৯”) কাজেই মত পার্থক্যকে কেন্দ্র করে পরস্পরের বিভাজনকে রাসূলুল্লাহ(স.) ভালো চোখে দেখেননিতিনি এরূপ আচরণের নিন্দা করেছেনসুতরাং বর্তমানে মুসলিম মিল্লাতের যে দুর্দিন অতিবাহিত হচ্ছে, এমতাবস্থায় ঐক্য খুবই জরুরীঐক্যবদ্ধ না হলে আরও করুণ পরিণতির সম্মুখীন হওয়া ছাড়া আর কোন উপায়ান্তর থাকবে না

Copyright @ 2013-15 উম্মাতে মুহম্মাদ - আদর্শে ফুরকান.