অামাদের সম্পর্কে জানতে নিচের লেখাটি পড়ুন

উম্মাতে মুহম্মাদ - আদর্শে ফুরকান

এটি ইসলামিক সংঘ, যার কাজ মানুষকে ধর্ম সম্পর্কে সচেতন করা এবং বিভিন্ন ধরনের সমাজ সংস্কারমূলক কাজ পরিচালনা করা । বর্তমানে এটি বরিশাল বিভাগের ...

ব্লগ থেকে

মুনাফিকের চরিত্রের বৈশিষ্ট কি?

মুনাফিকের চরিত্রের বৈশিষ্ট কি? সৈয়দ আমজাদ হোসেন : মুমিন একজন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। তাঁর মধ্যে শিরক, ফিসক, নিফাক, মিথ্যা, হিংসা, লোভ-লালসা, অহংঙ্গার ইত্যাদির সংমিশ্রণ ঘটে না, বিশেষ করে ঈমানদারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর হলো নিফাক তথা দ্বিমুখী আচরণ করা। নিফাক মুমিন থেকে ঈমান বের করে দেয়। মুমিনদের মধ্যে এ নিফাক থাকা অনুচিত। কেননা এ বৈশিষ্ট্যের কারণে তার সব সদ্গুণ বদগুণে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
মুনাফিকের সংজ্ঞা : মুনাফিক শব্দটি নফক শব্দ থেকে গঠিত। নফকের অর্থÑগর্ত, ছিদ্র, সুড়ঙ্গ, বের হওয়া, খরচ করা, ব্যয় করা। কারো মতে, “নাফেকুল ইয়ারবু” (পাহাড়ি ইঁদুর) থেকে মুনাফিক শব্দটি গঠিত। পাহাড়ি ইঁদুরকে “নাফেকুল ইয়ারবু” বলা হয়। কারণ পাহাড়ি ইঁদুর অত্যন্ত ধূর্ত হয়, এরা পাহাড়ে অনেক গর্ত খনন করে। এদের মারার জন্য এক গর্তে পানি বা অন্য কিছু দিলে অন্য গর্ত দিয়ে বের হয়ে পালিয়ে যায়, ফলে এদের সহজে মারা যায় না। মুনাফিকও অনুরূপ ধূর্ত। তাদের সহজে চেনা যায় না। মুনাফিকের সংজ্ঞা: আমার চিন্তাধারায়, ‘মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরি লালন করে’। এজন্য আল্লাহতা’য়ালা মুনাফিকদের বৈশিষ্ট তুলেধরেছেন, ৬৩নং সুরা আল-মুনাফিকনের ১নং-হইতে ৪নং আয়াতের মাধ্যমে। আল্লাহ বলেন, ৬৩:১। মুনাফিকরা তোমার কাছে আসিয়া বলে আমরা সাক্ষ্য দিতেছি, আপনি তো আল্লাহর রাসুল। আল্লাহ জানেন. তুমি অবশ্যই তাঁর রাসুল এবং স্বয়ং আল্লাহ সাক্ষ্যদেন মুনাফিরা মিথ্যুক।
৬৩:২। ওদের কওমকে ঢালরূপে ব্যবহার করে এভাবে ওরা নিবৃত্ত করে, মানুষকে আল্লাহর পথ হইতে; ওদের কর্মকান্ড নিত্যান্ত জঘন্য।
৬৩:৩। তা এজন্যে যে, ঈমান আনার পর কুফরী করিয়াছে, তাই মোহর করা হইয়াছে ওদের অন্তরে, ফলে ওরা বুঝেনা।

৬৩:৪। ওদিগের প্রতি তাকাইলে ওদের অবয়ব তোমার সুন্দর মনে; আর ওরা কথা বলিলে ওদের সাগ্রহে শোন, যদিও ওরা প্রাচিরে ঠেকানো কাঁঠের ব্লোক এর মত(কাঁঠেরটুকরা) যে কোন উচ্চবাচ্য (শোরগোল) শুনিলে ওরা ভাবে ওদের বিরুদ্ধে (বলা হইয়াছে), ওরাই (শত্রু) দুশমন, (সাবধান থাক) ওদিগে বর্জন কর; আল্লাহ ওদিগে বিনাশ (অভিষাপ দিচ্ছে) করুক কোথায় যাচ্ছে ওরা?
আল্লাহতা’য়ালা নবীকে (সা:) উপদেশ দিয়ে আরো বলেন, ৬৩:৬। ওদের জন্য তুমি ক্ষমা প্রার্থনা কর কিংবা না কর উভয় সমান, খনই ওদিগে আল্লাহ ক্ষমা করিবেন না, আল্লাহ ফাসেক কওমকে সৎপথ দেখান না।
৯:৭৩।(১০-রুক) হে নবী, আপনি শুনুন! কাফির ও মুনাফিকদের সাথে জিহাদ করুন। তাদের সাথে কঠোর  ব্যবস্থা গ্রহন করুন। তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম. সে ত বড়ই নিকৃষ্ট বাসস্থান।


৯:৮০। আপনি তাদের জন্য তাওবা ইসতিগফার করুন কিংবা না-ই করুন, এমন কি আপনি না যদি তাদের জন্য সাত্তুর বারও ইসতিগফার করেন তবও আল্লাহ ওদেরকে মাফ করবে না। শুধু এই জন্যই যে ওরা আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের অবাধ্য হয়েছে। আসলে আল্লাহ পাক অবাধ্য ফাছিক্কীনকে সরল সহজ সত্য সনাতন পথ মোটেই দেখান না।
৯:৮৪। (মুনাফিকদের জানাজা পড়া নিষেদ) তাদের মধ্যে কেউ মারা গেলে আপনি তার জন্য কখনও ছালাত/নামাজ আদায় করবেন না। কিংবা তার কবরের কাছে মোটেই দাঁড়াবেন না। তারা ত আল্লাহ ও তাঁর রাছুলের অবাধ্য হয়েছে। আর অমান্যকারীরূপেই মারা গেল।
৯:৬৭। (৯-রুক) মুনাফিক পুরুষ ও নারী একে অন্যের দোসর। তারা গহিত কাজেরই আদেশ দেয়। আর বিধিবদ্ধ নিষেধ করে। আর নিজেদের হাতগুলোকে গুটিয়ে রাখে। তারা যে আল্লাহকেই ভুলে গেছে। তাই আল্লাহ পাকও তাদেরকে বিস্মৃত হয়েছেন। একথা সত্য সুনিশ্চিত যে, মুনাফিকরা ত বড়ই অবাধ্য।
৯:৬৮। আল্লাহ মুনাফিক নারী-পুরুষ ও কাফিরদের সাথে ওয়াদা করেছেন জাহান্নামের আগুনের, আর সেখানেই তারা চিরকাল থাকবে, তাদের জন্য এই যথেষ্ট। আল্লাহ তাদেরকে অভিশাপ দিচ্ছেন। আর তাদের জন্য চিরস্থায়ী সাজা রয়েছে।
৯:৯৭। গাঁয়ের লোকগুলো অবাধ্যতা ও মুনাফেকীর ব্যাপারে বড়ই শক্ত। তাদের ত এমনই হওয়া চাই। কারন তারা সে সব বিধি-নিষেধ, নিয়মকানুন সম্পর্কে কিছুই জানে না- আল্লাহ পাক যা কিছু তাঁর রাছুলের কাছে নাজিল করেছেন। আল্লাহ সবই জানেন, তিনি মহান কুশলী।
৯:১০১। তোমাদের আশেপাশে যারা রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু গে’য়া লোক আসলে মুনাফিক। আর মদীনাদের বাশিন্দাদের মধ্যের কিছু লোক তেমনই রয়েছে। তারা মুনাফিকীর চরমে পৌছে গেছে। আপনি তাদেরকে মোটেই জানেন না। আমি তাদেরকে জানি। শীগগীরই আমি তাদেরকে দ্বিগুন সাজা দেব। তারপরে তাদেরকে বিরাট সাজার দিকেই ঠেলে দেয়া হবে।
মুনাফিকের চরিত্রের বৈশিষ্ট্য : আল্লাহতাআলা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্তÍ মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে নাজিল করেছেন। আল্লাহ বলেন, ২:৮। কতগুলো লোক বলে বেড়ায়: আমরাও কিয়ামতে বিশ্বাস করি; কিন্তু তারা মুমিন নয়।

২:৯। তারা আল্লাহ ও ঈমানদারদেরকে ঠকাতে চায়;অথচ নিজেরাই যে ঠক্ছে তা বুঝে না।
 ২:১০। তাদের মনে ব্যাধি রয়েছে; সুতরাং আল্লাহ তাদের মানুষিক ব্যাধি আরও বাড়িয়ে দিলেন- তাদেরকে কঠোর সাজা ভুগতেই হবে, কারন তারা মিথ্যা বলত।’
২:১১। আয়াত:-তাদেরকে  যখন বলা হয়, দেশে অসান্তি সৃষ্টি করনা। তারা বলে, আমরাই ত ভালর জন্য চেষ্টা করছি।

২:১২। শোন! এরাই ত সেই দল-যারা অসান্তি সৃষ্টি করছে, কিন্তু তা বুঝে না।
২:১৩। আবার যখন তাদেরকে বলা হয়: তোমরা আর সবার মতই ঈমানদার হও। তারা বলে: আমরাও কি নির্বোধগুলোর মতই ঈমানদার বলে গন্য হব? শোন!এরাই ত সে দল-যারা নির্বোধ;কিন্তুএরা যে তাও জানে না (উদেশমূলক)
২:১৪। এরা যখন ঈমানদারদের সাথে দেখা করে, তখন বলে: আমরা ত বিশ্বাসী! কিন্তু যখন তারা শয়তান সাথীদের সাথে নিভৃতে থাকে, তখন বলে: আমরা ত তোমাদের সাথেই রয়েছি; আমরা শুধু বিদ্ধ্রপ করে থাকি।
 তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরো ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলোÑ
মুনাফিকরা দুমুখো স্বভাবের : মুনাফিকরা দুমুখো আচরণ করে। বাহ্যিকভাবে নিজেদের মুমিন বলে পরিচয় দেয় অথচ তাদের ভেতরে ঈমান নেই। ঈমান তিনটি জিনিসের সমন্বয়ের নাম। ১. অন্তরের বিশ্বাস, ২. মৌখিক স্বীকৃতি এবং ৩. স্বীকৃতি অনুযায়ী আমল করা (ইবনে মাজাহ)। মুনাফিক শুধু মৌখিকভাবে ঈমানের স্বীকৃতি দান করে, কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস লালন করে না। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, “আর মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখিরাতে ঈমান এনেছি, অথচ তারা মুমিন নয়।” (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮)
মুনাফিকরা নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী মনে করে : মুনাফিকরা সমাজে বিভিন্ন ধরনের ফ্যাসাদ ও অশান্তি সৃষ্টি করে থাকে, অথচ তারা প্রচার-প্রপাগান্ডায় নিজেদের শান্তি প্রতিষ্ঠাকারী বলে পরিচয় দেয়। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, “আর যখনই তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ফ্যাসাদ সৃষ্টি কোরো না, তারা উত্তরে বলেÑআমরাই তো সংশোধনকারী ও শান্তিকামী।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১১)
মুনাফিকরা ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী : ইসলাম শান্তির ধর্ম। মুনাফিকরা ইসলাম ও সামাজিক শান্তির বিরোধিতা করে অশান্তি সৃষ্টি করে। কিন্তু নিজেদের ভ্রষ্টতা ও অজ্ঞতার কারণে তা অনুভব করতে পারে না। আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, “সাবধান! এরাই ফ্যাসাদ সৃষ্টিকারী, কিন্তু তাদের সে অনুভূতি নেই।” (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১২)
মুনাফিকরা প্রতারক : আল্লাহতাআলা ইরশাদ করেন, “অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করছে, অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। বস্তুত তারা যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন একান্ত শিথিলভাবে লোকদেখানোর জন্য দাঁড়ায়। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয়, ওদিকেও নয়।” (সুরা : নিসা, আয়াত : ১৪২-১৪৫) ৪:১৪২। (২১-রুক) নিশ্চয়ই মোনাফিকরা আল্লাহর সাথেই চালবাজী করেছে- তাদেরকে এই চালবাজীর সাজা অবশ্যই দেবেন। ওরা যাখন ছালাতে দাঁড়াবে তখন একেবারে অলসদের মতই থাকে। শুধু লোক দেখানোর জন্যই । ওরা আল্লাহর  জিকিরর তেমন বেশী করে না, খুবই সামান্য পরিমান ছাড়া।
৪:১৪৩। দ্বিধা-সংকোজ নিয়েই ওরা থাকে দু’য়ের মাঝখানে, না-এদিকে না ওদিকে। আল্লাহ যাকে গোমরাহ করেন, তার জন্য কোনও পথ আপনি খুজে পাবেন না।
৪:১৪৪। তোমরা যারা ঈমান এনেছ শোন! কখনও  তোমরা কাফিরগেুলোকে বন্ধু  হিসেবে গ্রহন কর- না মুমিনদেরকে বাদ দিয়ে। তোমরা কি এভাবে নিজেদের উপরে আল্লাহর সুষ্পষ্ট ও চূড়ান্ত অেিযাগ কায়েম করতে চাও?
৪:১৪৫। নিশ্চয়ই মোনাফিকরা দোজখের একেবারে নীচের ভাগেই থাকবে তাদের জন্য কোনও সাহজায্যকারী আপনি খুজে পাবেন না।

মুনাফিকদের আরো অসংখ্য বৈশিষ্ট্য ও চারিত্রিক দোষ-ত্রুটি কুরআন ও হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে। আল্লাহতা’আলা আমাদের এসব মুনাফিকদের থেকে হেফাজত করুন, আমিন!
x

Copyright @ 2013-15 উম্মাতে মুহম্মাদ - আদর্শে ফুরকান.