উম্মাহর ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপে আল-কুদ্স ও ফিলিস্তিনের মুক্তি অবশ্যম্ভাবী
‰mq`
AvgRv` †nv‡mb : কোরআন মজীদে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডকে “র্আদে
মুক্বাদ্দাস্”
(পবিত্র
ভূমি) বলে উল্লেখ করা হয়েছে, আর এ ভূখণ্ডের কেন্দ্রীয় শহর আল্-কুদ্স্ বা বায়তুল
মুক্বাদ্দাস্ বিশেষ পবিত্রতার অধিকারী। মুসলিম
উম্মাহ প্রতিষ্ঠাতা হযরত ইব্রাহীম্ (‘আঃ) সহ বহু নবী-রাসূলের (‘আঃ) স্মৃতিধন্য এ
শহরে অবস্থিত মসজিদুল্ আকসা ইসলামের প্রথম কিবলা। কিন্তু
পরম দুর্ভাগ্যের
বিষয় যে, এ
পবিত্র শহর সহ ফিলিস্তিন ভূখণ্ডের বেশীর ভাগই ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহ ঘৃণ্য
দুশমন যায়নবাদীদের অবৈধ দখলে।
ইতিহাস সাক্ষী, ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে বিনা রক্তপাতে
মুসলমানদের নিয়ন্ত্রণে আসে এবং দীর্ঘ বারোশ’ বছরেরও বেশীকাল তাদের শাসনাধীনে
থাকাকালে মুসলমানদের পাশাপাশি খৃস্টানরা এখানে বসবাস ও যিয়ারতের পূর্ণ স্বাধীনতা
ভোগ করে। অন্যদিকে
খৃস্টান শাসনের আগে ইয়াহূদীরা এখানে যে সব অমানবিক অপরাধ করেছিলো সে কারণে
খৃস্টানরা এ ভূখণ্ডে ইয়াহূদীদের বসবাসের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলেও মুসলিম
শাসনামলে তারা এ শহরে যিয়ারতের সুবিধা ভোগ করে।
কিন্তু যায়নবাদী ইয়াহূদীরা বিভিন্ন অপকৌশলের আশ্রয় নিয়ে বিংশ
শতাব্দীর শুরু
থেকে ফিলিস্তিনে ভূমি দখলের কর্মসূচী বাস্তবায়ন করতে থাকে। তা
সত্ত্বেও
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সমাপ্তিকাল পর্যন্ত ইয়াহূদীরা ফিলিস্তিনের মোট জনসংখ্যার
শতকরা সাত ভাগের বেশী ছিলো না। কিন্তু বৃটিশ
উপনিবেশবাদী শক্তি আরবদেরকে স্বাধীনতার মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে বিশ্বযুদ্ধে
তুর্কী ওসমানী শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহে উস্কানি দেয় এবং এতে প্রতারিত হয়ে
আরবরা বৃটিশদের পক্ষে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে তুর্কীদেরকে পরাস্ত করে। কিন্তু বৃটিশরা সমগ্র আরব ভূখণ্ডকে একটিমাত্র আরব রাষ্ট্রে
পরিণত করার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এ ভূখণ্ডকে অনেকগুলো ছোট ছোট তাবেদার
রাষ্ট্রে বিভক্ত করে। আর ফিলিস্তিনকে বৃটিশ শাসনে
রেখে যায়নবাদীদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তাদেরকে বিজাতীয় ইয়াহূদীদেরকে
এনে ফিলিস্তিনে বসতি প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দেয়। এভাবে
ফিলিস্তিনে
অবৈধ যায়নবাদী ইসরাঈল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্তুত করা হয়।
অবশ্য শুরু থেকেই ফিলিস্তিনের জনগণ এর বিরুদ্ধে অনবরত রাজনৈতিক
প্রতিবাদ জানায়
এবং একের পর এক বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামরিক সংগঠন গড়ে তুলে যায়নবাদীদের
বিরুদ্ধে কয়েক বার প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলে যার মধ্যে শহীদ ইয্যুদ্দীন্
ক্বাস্সামের নেতৃত্বে পরিচালিত জিহাদ ছিলো সe©vধিক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বৃটিশ
সরকার ও যায়নবাদীদের সাথে ষড়যন্ত্রক্রমে প্রতিবেশী রাজতান্ত্রিক সরকারগুলোর
হস্তক্ষেপের ফলে এ সব প্রতিরোধ যুদ্ধ বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েও
আলোচনার টেবিলে বসে ব্যর্থ হয়ে যায়। শেষ পh¨র্ন্ত যায়নবাদীরা লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনীকে
হত্যা ও উৎখাতের মাধ্যমে ফিলিস্তিনের বেশীর ভাগ এলাকা দখল করে ১৯৪৮ খৃস্টাব্দের ১৫ই মে
ইসরাঈল রাষ্ট্র
প্রতিষ্ঠা করে।
এরপরও ফিলিস্তিনী জনগণ সব সময়ই ফিলিস্তিনকে মুক্ত করার লক্ষ্যে
রাজনৈতিক ও
সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে আসছিলো, কিন্তু মুসলিম উম্মাহর উদাসীনতার কারণে
তাদের পক্ষে
আমেরিকার সামরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতাপ্রাপ্ত ইসরাঈলকে উৎপাটন করা
সম্ভব হয় নি। অধিকন্তু যথাযথ প্রস্তুতি ও
সমগ্র মুসলিম উম্মাহর অংশগ্রহণ ছাড়া ১৯৬৭-র জুনে কয়েকটি আরব দেশ ইসরাঈলের
বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিস্ময়করভাবে শোচনীয় ও কাপুরুষোচিত
পরাজয় বরণ করে। এ যুদ্ধে ফিলিস্তিনের অবশিষ্ট এলাকা এবং
মিসরের সীনাই
ভূখণ্ড ও সিরিয়ার গোলান অধিত্যকা ইসরাঈলের দখলে চলে যায়। পরে
১৯৭৯ সালে
আমেরিকার পদলেহী মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত ক্যাম্প ডেভিড চুক্তিতে
স্বাক্ষর করে সীনাই ভূখণ্ড ফেরত পাবার বিনিময়ে ইসরাঈলকে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
এ সময় থেকে মুসলিম উম্মাহ্র মধ্যে একটি হতাশাব্যঞ্জক ধারণা গড়ে
ওঠে; তারা
ইসরাঈলকে অপরাজেয় মনে করতে থাকে এবং মুসলিম দেশসমূহের সরকারগুলো ইসরাঈলকে
একটি অনস্বীকাh¨
স্থায়ী বাস্তবতা বলে মেনে নেয়ার জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে পড়ে। শুধু তা-ই নয়, এ সময় থেকে ফিলিস্তিন উদ্ধারের সংগ্রামে
মশগূল
ফিলিস্তিন মুক্তি সংস্থা (পিএলও)ও ইসরাঈলের বিরুদ্ধে কোনো কাh¨র্কর আঘাত হানা থেকে বিরত থাকে। অবশেষে পিএলও ১৯৯৩ সালে জর্দান নদীর পশ্চিম তীর ও গাযাহ্র দু’টি ভূখণ্ডে
নাম-কা-ওয়াস্তে স্বায়ত্তশাসন লাভের ও ভবিষ্যত স্বাধীনতার প্রতিশ্রুতির বিনিময়ে
ইসরাঈলকে স্বীকৃতি প্রদান করে।
তবে ফিলিস্তিন মুক্তি সংগ্রামের এ হতাশাব্যঞ্জক মোড় পরিবর্তনের
পাশাপাশি একটি
নতুন আশার আলো দেখা যায়। তা হচ্ছে
১৯৭৯ সালে হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.)-এর নেতৃত্বে সংঘটিত ইরানের ইসলামী বিপ্লব। শুরু থেকেই ইরানের ইসলামী বিপ্লবের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য
ছিলো যায়নবাদী ইসরাঈলের বিলুপ্তি ও সমগ্র ফিলিস্তিন ভূখ- জুড়ে স্বাধীন-সার্বভৌম
ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা। তাই বিপ্লবের
বিজয়ের পর পরই ইরানের ইসলামী সরকার ইসরাঈলের ওপর থেকে স্বীকৃতি প্রত্যাহার
করে এবং তেহরানস্থ ইসরাঈল দূতাবাসকে ফিলিস্তিন দূতাবাস নামকরণ করে পিএলও-র
কাছে হস্তান্তর করে। এছাড়া ফিলিস্তিন ও আল্-কুদ্স্-এর
মুক্তির লক্ষ্যে
সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্কে ঐক্যবদ্ধকরণের জন্য হযরত ইমাম খোমেইনী (রহ্.) মাহে
রামাযানের শেষ শুক্রবারকে আল্-কুদ্স্ দিবস ঘোষণা করেন; তখন থেকে বিশ্ব
মুসলিম এ দিবসটি পালন করে আসছে।
কিন্তু ইরানের প্রাজ্ঞ নেতৃবৃন্দ পিএলও-র দুeর্লতাগুলো লক্ষ্য করেছিলেন। এ কারণেই লেবাননে হিযবুল্লাহ্ এবং ফিলিস্তিনে জিহাদুল ইসলামী
বায়তুল মুকাদেস
ও পরে এর সামরিক শাখা হামাস গড়ে তোলার ক্ষেত্রে ইরান সevর্ত্মক সহযোগিতা প্রদান করে। আর হিযবুল্লাহ্ ও হামাস ইতিমধ্যেই তাদের শক্তি ও সম্ভাবনার
পরিচয় দিয়েছে।
১৯৯৩-র চুক্তি সম্পাদনকালে যায়নবাদী ইসরাঈল ও তার পৃষ্ঠপোষক
আমেরিকার পরিকল্পনা
ছিলো এই যে, স্বায়ত্তশাসনের
নামে ইসরাঈলের সাথে পিএলও-র অধীনতামূলক মৈত্রী অনির্দিষ্ট কাল পhর্ন্ত চলতে থাকবে। কিন্তু
হামাস ২০০৬ সালের
২৫শে জানুয়ারী অনুষ্ঠিত গাযাহ্ ও পশ্চিম তীরের স্বায়ত্তশাসন কর্তৃপক্ষের নিevর্চনে অংশগ্রহণ করে নিরঙ্কুশ বিজয়ের অধিকারী
হয়ে সরকার গঠন করে। ফলে আমেরিকা
ও ইসরাঈল তাদের পরিকল্পনা ভণ্ডুল হয়ে যেতে দেখে তাদের বশংবদ পিএলও-র
নেতা ও তথাপকিথত স্বায়ত্তশাসন কর্তৃপক্ষের প্রেসিডেন্ট মাহমূদ
আব্বাসকে চাপ দিয়ে হামাস সরকারকে বরখাস্ত করায়। কিন্তু
মাহমূদ আব্বাস
ইসরাঈলী বাহিনীর সহায়তায় পশ্চিম তীরে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হলেও গাযাহ্
হামাসের শাসনাধীনে থেকে যায়।
২০০৮ থেকে এ পh¨র্ন্ত যায়নবাদী ইসরাঈল গাযাহ্ দখলের জন্য তিন তিন বার সevর্ত্মক যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়। কিন্তু
ইরানের আর্থিক ও অস্ত্র সাহায্যপুষ্ট হামাস কঠিন প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ফলে প্রতিবারই গাযাহ্র ব্যাপক মানবিক ও অর্থনৈতিক
ক্ষতি হলেও যায়নবাদী ইসরাঈল গাযাহ্ দখলে ও হামাসের পতন ঘটাতে পুরোপুরিভাবে
ব্যর্থ হয়। অন্যদিকে হিযবুল্লাহ্ তিন তিন বার
অপরাজেয় হিসেবে পরিগণিত ইসরাঈলের ওপর শোচনীয় পরাজয় চাপিয়ে দেয়।
১৯৮৬ সালে ইসরাঈল দক্ষিণ লেবানন ও রাজধানী বৈরুত সহ লেবাননের
বেশীর ভাগ এলাকা
দখল করে নিলে হিযবুল্লাহ্র গেরিলা হামলার মুখে লেবানন থেকে চলে যেতে বাধ্য হয়। তবে তারা দক্ষিণ লেবাননের ৮৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় তাদের
তাবেদার
এসএলএ বাহিনীকে বসিয়ে যায়। কিন্তু ২০০০
সালে হিযবুল্লাহ্ অভিযান চালিয়ে এসএলএ ও ইসরাঈলী সৈন্যদেরকে সেখান থেকে বিতাড়িত করে;
কেবল
শেবা নামক একটি
ছোট্ট এলাকা ইসরাঈলের দখলে থেকে যায়। ২০০৬ সালের
মাঝামাঝি হিযবুল্লাহ্
এ জায়গাটিও মুক্ত করে। প্রতিক্রিয়ায় ইসরাঈল হিযবুল্লাহ্র
বিরুদ্ধে
এক সevর্ত্মক যুদ্ধ শুরু
করলেও শেষ পh¨র্ন্ত শুধু পরাজিত
হয়ে পশ্চাদপসরণই
করে নি, বরং
প্রাণ নিয়ে পশ্চাদপসরণ সম্ভব করার জন্য জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় হিযবুল্লাহ্র সাথে
শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করতে বাধ্য হয়।
ইরানের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা ও এগিয়ে চলা হামাস ও হিযবুল্লাহ্র
বিরাট সাফল্য
প্রমাণ করে যে, অবৈধ রাষ্ট্র যায়নবাদী ইসরাঈলের বিলুপ্তি ও সমগ্র ফিলিস্তিন
ভূখণ্ড জুড়ে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কেবল স্বপ্নমাত্র নয়, বরং আগামী
দিনের বাস্তবতা। তবে এ জন্য সমগ্র মুসলিম উম্মাহকে
ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ
নিতে হবে। কারণ, ইসরাঈলকে উৎখাতের জন্য আগামী
দিনে যে যুদ্ধ হবে তা কেবল একা ইসরাঈলের বিরুদ্ধে নয়, বরং তার
পিছনে রয়েছে বিশ্বের সমস্ত ইসলাম-বিরোধী বলদর্পী শক্তি। অন্যদিকে
এ-ও প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় সত্য যে, এ যুদ্ধে মুসলিম উম্মাহ্র
নেতৃত্বে থাকবে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। আর এ যুদ্ধে
ইসলামী বাহিনীকে ফিলিস্তিন সীমান্তে পৌঁছতে হবে এর সাথে সীমান্তের অধিকারী
সিরিয়ার মধ্য দিয়ে।
সৌভাগ্যবশতঃ সিরিয়ায় অধিষ্ঠিত আছে এমন একটি সরকার যা সব সময়ই
ফিলিস্তিনী জনগণের
মুক্তিসংগ্রামে পৃষ্ঠপোষকতা দিয়ে আসছে; বরং এ সরকার হচ্ছে ফিলিস্তিনীদের
পৃষ্ঠপোষক একমাত্র আরব সরকার। এ কারণেই
ইসলামের দুশমনরা সিরিয়ায় এমন একটি সরকারকে বসাতে চায় যা হবে আমেরিকা ও ইসরাঈলের
তাবেদার। এ লক্ষ্যেই তারা সারা দুনিয়া থেকে
ইসলামের মিথ্যা পরিচয় প্রদানকারী তাদেরই তৈরী করা হাজার হাজার ভÛ প্রতারক সন্ত্রাসীকে এনে এ দেশটির ওপর গৃহযুদ্ধ চাপিয়ে
দিয়েছে।
আজ মুসলিম উম্মাহ্র জন্য আল্-কুদ্স্ সহ সমগ্র ফিলিস্তিনের
মুক্তিকে সeর্প্রধান লক্ষ্য
হিসেবে গ্রহণ করা অপরিহাh¨। ইসলাম ও
মুসলমানদের দুশমনরা বিভিন্ন ধরনের সঙ্কীর্ণ মাযহাবী, রাজনৈতিক,
অর্থনৈতিক
ও অন্যান্য বিভেদ উস্কে দিয়ে তাদেরকে এ লক্ষ্য থেকে বিচ্যুত করতে চায়। এ ব্যাপারে তাদেরকে সচেতন হতে হবে এবং ঐক্যবদ্ধ পদক্ষেপ
নিতে হবে। তাহলে আশা করা যায় যে, হামাস
ও
হিযবুল্লাহ্র সাফল্য যে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে সে আলোয় পথ চললে চূড়ান্ত সফল্য ও বিজয়
অবশ্যম্ভাবী।