কুরআনে বর্ণিত মুমিনের গুণাবলি
প্রথম গুণ: ‘তারা তাদের নামাজে বিনয় নম্রতা অবলম্বন করেছে’। প্রথম গুণ নামাজ সম্পর্কিত। নামাজে খুশু-খুজু অবলম্বন করা। এর এক অর্থ হলো নামাজে স্থিরমানতা, নড়াচাড়া না কারা ইত্যাদি। নামাজে নড়াচড়া করা মাকরুহাতের অন্তর্ভুক্ত। কেউ কেউ আবার এ অর্থও নিয়েছেন যে, নামাজে কাপড় বা শরীর নিয়ে খেলা না করা, ইচ্ছাপূর্বক নাড়া না দেয়া।
দ্বিতীয় গুণ: ‘তারা নিজেদেরকে অনর্থ কাজ থেকে বিরত রাখে’। অনর্থ কাজ বাস্তবেও ভদ্রতার পরিপন্থী। আরবি শব্দ ‘লাগব’- এর অর্থ হলো উপকারবিহীন কাজ করা। যে কাজে কোনো সওয়াব বা উপকার নেই। একবার জনৈক সাহাবি দেখলেন একজন বালক অনর্থ কঙ্কর নিক্ষেপ করছে। সাহাবি তাকে নিষেধ করলেন। সে শোনেনি। অতপর সাহাবি রাগান্বিত হয়ে বললেন; ‘আল্লাহর কসম যদি তুমি এ অনর্থ কাজ হতে বিরত না হও, আমি তোমার জানাজায় উপস্থিত হবো না’।
তৃতীয় গুণ: ‘তারা নিয়মিত জাকাত আদায় করে’। জাকাত ইসলামের বুনিয়াদি বিষয়। সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি জাকাত আদায় না করে তাহলে তার ইসলাম পূর্ণ হবে না। জাকাতের শাব্দিক অর্থ শুদ্ধিকরণ, পবিত্রকরণ ইত্যাদি। পরিভাষায় কিছু শর্তের মাধ্যমে সম্পদের নির্দিষ্ট অংশ দান করা। আলোচ্য আয়াতে শরিয়তের জাকাত উদ্দেশ্য হতে পারে। কুরআনুল কারিমেও জাতাতের তাগিদ এসেছে বারংবার। এসেছে জাকাতের দীর্ঘ বিবরণ। জাকাত আদায় করার দ্বারা মালের পবিত্রতা রক্ষা পায়, মালের নাপাকি দূর হয়।
চতুর্থ গুণ: ‘তারা নিজেদের লজ্জাস্থান হেফাজত করে’। মানুষের পাপের বিশাল অংশ লজ্জাস্থানের দ্বারা হয়। অধিকাংশ পাপের মূল্য উপাধান লজ্জাস্থান। কামভাব চরিতার্থ করার জন্য প্রয়োজন পড়ে লজ্জাস্থানের। তাই মহান আল্লাহ সফল মুমিনের একটি গুণ নির্ধারণ করেছেন ‘লজ্জাস্থান’ হেফাজত করা। এ ছাড়া রাসূল সা. থেকে সাহল ইবনে সাদ বর্ণনা করেন; রাসূলুল্লাাহ সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমার কাছে তার দু‘চোয়ালের মধ্যাঅংশ (জিহ্বা) এবং দু‘রানের মধ্যাংশ লজ্জাস্থান হেফাজতের ওয়াদা দেবে, আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবে।
পঞ্চম গুণ: ‘তারা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুশিয়ার থাকে’। আমানত রক্ষা করা মুমিনের জন্য ফরজ। আমানতের শাব্দিক অর্থ নিরাপদ ও হেফাজত করা। এর দ্বারা বুঝা যায় বান্দার কাছে গচ্ছিত সব বিষয়ে সে আমানতদার। চাই তা হক্কুল্লাহ বা ইবাদুল্লাহ হোক। আল্লাহর হক বান্দার কছে সব আদেশ নিষেধ ফরজ ও ওয়াজিবসমূহ। বান্দা যদি ফরজ ও ওয়াজিবাত পালন না করে তাহলে সে আল্লাহর দেয়া আমানত রক্ষা করল না। এমনভাবে যদি কারো গচ্ছিত মালের ব্যাপারে খিয়ানত করে। তা হলে সে আমানত রক্ষা করল না।
ষষ্ঠ গুণ: ‘তারা অঙ্গীকার রক্ষা করে’। অঙ্গীকার বলতে প্রথমত দ্বিপক্ষীয় চুক্তিকে বুঝায়, যা কোনো ব্যাপারে উভয়পক্ষ ওয়াজিব করে নেয়। এরূপ অঙ্গীকার আদায় করা ফরজ। না করলে কবিরাহ গুনাহ হবে। দ্বিতীয়ত অঙ্গীকার ওয়াদাকে বলা হয়। অর্থাৎ কাউকে কিছু দেওয়া না দেওয়ার ওয়াদা করা বা কিছু করে দেয়ার ওয়াদা করা। এটা পালন করাও শরিয়ত ব্যক্তির উপর জরুরি করে দিয়েছে; যা ওয়াজিব। হাদিস শরিফে এসেছে ওয়াদা এক প্রকার ঋণ। আর তা আদায় করা জরুরি। সুতরাং ওয়াদা পালন করাও ওয়াজিব।
সপ্তম গুণ: ‘তারা তাদের নামাজে যতœবান হয়’। নামাজে যতœবান হওয়া মুমিনের গুণ। নামাজে যতœবান হওয়ার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নামাজকে তারা মোস্তাহাব সময়ে আদায় করে। ফরজিয়্যাত ও ওয়াজিবাত আদায়ের সাথে সাথে সুন্নত মোস্তাহাবসহ আদায় করে।